শিরোনাম

সিয়ামের উদ্দেশ্য ও মানবজীবনে তার প্রভাব

0

এমবিপ্র ডেস্ক: রমজান মাসে আল্লাহ তায়ালা বান্দার ওপর রোজা ফরজ করে দেয়ার মধ্যে অনেক উদ্দেশ্য বিপুল হিকমত নিহিত রয়েছে। সম্পর্কে নিম্নে কয়েকটি উদ্ধৃতি পেশ করা হলো। ইমাম গাজ্জালী রহ. তার স্বভাবসুলভ দার্শনিক দৃষ্টিভঙ্গিতে সিয়ামের উদ্দেশ্য সম্পর্কে আলোকপাত করতে গিয়ে লিখেছেন, ‘আখলাকে ইলাহী তথা ঐশ্বরিক গুণে মানুষকে ফেরেশতাদের অনুকরণের মাধ্যমে যতদূর সম্ভব নিজেকে প্রবৃত্তির গোলামি থেকে মুক্ত হওয়ার শিক্ষা দেয়। কেননা ফেরেশতারা সব চাহিদা থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত। আর মানুষের মর্যাদা পশুর চেয়েও ঊর্ধ্বে। কেননা, মানুষ জ্ঞানের আলো দ্বারা জৈবিক চাহিদা মোকাবেলা করতে সক্ষম। আর তার স্থান ফেরেশতাদের চেয়ে নিম্নস্তরের, যেহেতু কখনো কখনো তার ওপর জৈবিক চাহিদা বিজয় লাভ করে এবং তার ভেতরের পশুত্ব দমনে তাকে কঠোর সাধনা করতে হয়। মানুষ যখন পাশবিক ইচ্ছার সুতীব্র স্রোতে গা ভাসিয়ে দেয়, তখন সে নেমে যায় অধঃপতনের নিম্নতম স্থানে। তখন অরণ্যের পশু আর লোকালয়ের মানুষের মাঝে কোনো প্রভেদ থাকে না। আর যখন যে তার পাশবিকতা দমন করতে সক্ষম হয়, তখন তার স্থান নির্ধারিত হয় নূরের ফেরেশতাদের ওপরে। (ইহয়াউল উলূম : /২১২)  আল্লামা ইবনুল কাইয়িম রহ. বিষয়ের ওপর আরো বিস্তারিত আলোকপাত করেছেন। তিনি বলেন, ‘সিয়ামের উদ্দেশ্য হলো, তার পাশবিক ইচ্ছা জৈবিক চাহিদাসমূহের মধ্যে সুস্থতা স্বাভাবিকতা প্রতিষ্ঠা করা। সিয়াম সাধনার মাধ্যমেই মানুষ আত্মশুদ্ধি পবিত্রতা অর্জন করে; চিরন্তন জীবনের অনন্ত সফলতার স্বর্ণশিখরে আরোহণ করে। ক্ষুধাপিপাসার কারণে জৈবিক পাশবিক ইচ্ছা মতে ভাটা পড়ে। পশুত্ব নিস্তেজ হয়ে যায়। মানুষ্যত্ব জাগ্রত হয় এবং দারিদ্র্যপীড়িত অগণিত আদম সন্তানের অনাহারক্লিষ্ট মুখ তখন তার অন্তরে সহানুভতির উদ্রেক করে। অন্তর বিগলিত হয় মহান রাব্বুল আলামীনের কৃতজ্ঞতায়। সিয়াম শয়তানের সকল পথ রুদ্ধ করে দেয় এবং মানুষের সকল অঙ্গপ্রত্যঙ্গকে হেফাজত করে দুনিয়া আখেরাত বিনষ্টকারী কাজ থেকে। বস্তুত এটি কাজ করে লাগামস্বরূপ। সিয়াম এমন এক মজবুত ঢাল, যা মানুষকে শয়তানের সকল আক্রমণ থেকে আত্মরক্ষায় সাহায্য করে। সিয়ামের আরো কিছু উপকারিতার আলোচনা করতে গিয়ে তিনি বলেছেন, মানুষের শারীরিক আত্মিক শক্তি হেফাজত করার ক্ষেত্রে সিয়াম অত্যন্ত কার্যকর মিকা পালন করে। বিভিন্ন ক্ষতিকর উপসর্গ থেকে মানুষকে সে রক্ষা করে। পাশবিক চাহিদার প্রাবল্য থেকে মুক্তি দেয়। দৈহিক স্বাস্থ্যের জন্য সিয়াম যেমন উপকারী, তদ্রুপ পবিত্র জীবন যাপনের পক্ষেও তা খুব সহায়ক। আল্লাহপাক ইরশাদ করেন, ‘হে মুমিনগণ, তোমাদের ওপর সিয়াম ফরজ করা হয়েছে, যেমন তোমাদের পূর্ববর্তীদের ওপর ফরজ করা হয়েছিল। সন্দেহ নেই যে, তোমরা মুত্তাকি হতে পারবে। (সূরা বাকারা : আয়াত ১৮৩) আল্লাহর পেয়ারা হাবিব ইরশাদ করেছেন, ‘মুমিনের জন্য সিয়াম হচ্ছে ঢালস্বরূপ। জন্য আর্থিক অস্বচ্ছলতার কারণে বিবাহে অপারগ ব্যক্তিদের সিয়ামের পরামর্শ দেয়া হয়েছে। মোট কথা, সিয়ামের হিকমত উপকারিতা জ্ঞানবুদ্ধি যুক্তির কষ্টিপাথরে প্রমাণিত এবং সর্বজনস্বীকৃত সত্য। আল্লাহপাক বান্দার কল্যাণের জন্যই শুধু নিজ দয়া রহমত গুণে আমাদের ওপর সিয়াম তথা রোজা ফরজ করেছেন।’ (যাদুল মাআদ : /১৬৮)  সিয়ামের তাৎপর্য সম্পর্কে আলোকপাত করতে গিয়ে আল্লামা ইবনুল কাইয়্যিম রহ. আরো লিখেছেন, ‘কলবের ইসলাহ চরিত্র সংশোধন নির্ভর করে সকল মনোযোগ আল্লাহর দিকে কেন্দ্রীভ করার ওপর। তাওয়াজ্জুহজ ইলাল্লাহ বা আল্লাহর প্রতি মনোনিবেশ মানুষের অন্তরে প্রশান্তি এনে দেয়। পক্ষান্তরে পানাহারের প্রতি মাত্রাতিরিক্ত আসক্তি, অযথা গল্পগুজব সং¯্রব তা বিনষ্ট করে। ফলে আল্লাহর সাথে মানুষের সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় এবং মানুষের সত্য পথ থেকে বিচ্যুত হয়ে গোমরাহিতে লিপ্ত হয়।’ (আরকানে আরবাআ)

Print Friendly, PDF & Email

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.